খাইলে পস্তাইবেন না খাইলেও পস্তাইবেন। হরেক রঙের হাওয়াই মিঠাই,হাওয়াই মিঠাই নেবে… হাওয়াই মিঠাই….মিষ্টি নরম গোলাপি সাদা হাওয়াই মিঠাই…। এভাবেই হাক-ডাক দিয়ে গ্রামের রাস্তায় হাজির হতেন হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালারা। পিতল বা কাঁসার ঘণ্টার টিং টিং শব্দ কিংবা বাঁশি বাজিয়ে জানান দিত ফেরিওয়ালার হাজিরার। তার সঙ্গে টিন-কাচের একটি বাক্স ভর্তি থাকতো ছোট ছোট হাওয়াই মিঠাই। ফেরিওয়ালার এই ডাক শুনেই ছুঁটে আসতো ছেলেমেয়েরা। ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা খরচ করলেই পাওয়া যেতো কয়েক পিছ। মাঝে মধ্যে আবার পুরনো ভাঙারি জিনিসেও মিলতো। কাচঘেরা বাক্সে ছোট ছোট গোল হাওয়াই মিঠাই রাখা হতো। মুখে দিলেই হাওয়ার মতো মিলিয়ে যেতো, তবু মুখে যে স্বাদ লেগে থাকতো তার অনুভূতি ছিলো অতিব চমৎকার।
কালের পারিবর্তনে বদলে গেছে অনেককিছুই। মানুষের নিত্যদিনের খাদ্যাভাসে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বদলে গেছে খাবারের স্বাদ বদলে গেছে খাবারের মান। বিশেষ করে ফেরি করে বিক্রি করা খাবারে এসেছে অনেক পরিবর্তন। আধুনিক ফাস্টফুডসহ নানা খাবারের তোড়ে অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে মিষ্টি খাবার হাওয়াই মিঠাই। তবু মাঝে মধ্যে দেখা মেলে কোনো পার্কে কিংবা জনজমায়েত অথবা বিভিন্ন মেলায়। লম্বা কাঠির মাথায় পলিব্যাগে মোড়ানো গোলাপি সাদা হাওয়াই মিঠাই। ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়ায় ফেরিওয়ালা। কাঠিতে পেঁচিয়ে পলিথিনে মোড়ানো গোলাপি রঙের হাওয়াই মিঠাই শহরের পথে। ছবি : নাইম হাসান রিদয় হাওয়াই মিঠাই নেবে… হাওয়াই মিঠাই….মিষ্টি নরম গোলাপি-সাদা হাওয়াই মিঠাই…!’—স্বপ্নবান,উদ্যমি কিশোর ফেরিওয়ালারা লম্বা কাঠির মাথায় পলিব্যাগে মোড়ানো গোলাপি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে এভাবেই হাজির হলেন ক্লান্ত দুপুরে এ যেন এক টুকরো স্বপ্নের মতো বিষয় ছিল। ছবিতে থাকা কিশোরের নাম আরিফ, এখনও হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন ঘুরে ঘুরে নবীনগর স্মৃতিসৌধ, কুটির শিল্প বাজার (নবীনগর,সাভার ঢাকা ) এর আশেপাশেই।
১৯ বছর বয়সী এ কিশোর ফেরিওয়ালা গত এক বছর ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করেন। আগে সারা বছরই গ্রামে মা বাবার কাছেই থাকতেন;করোনার ঢেউ এসে পরিবারের অভাব অনটনে ,জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে নিশ্বাসে,নিশ্বাসে জেগে ওঠা স্বপ্নগুলো অন্ধকারে বিমুর্ত কবিতার রূপ নিয়েছে বলেই হয়তোবা আজ এই বেশে,এই পথে। আরিফ জানান, “হাওয়াই মিঠাই ভালো জিনিস। খেতে অনেক মিষ্টি। পেট ভরে না, কিন্তু মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় মোটামুটি সব টাইপের মানুষই কিনে আমার কাছে থেকে। তবে সবাই ছেলে-মেয়ে,বাচ্চা শিশুদের জন্য বেশি কিনে থাকেন। শিশুরা বেশ মজা করেই খায়।” শুধু শিশুরাই নয় বড়রাও আমার কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে খায়। সারাদিন ২০০ থেকে ৩০০,আবার কোনো দিন ৫০০ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে থাকি। এছাড়া সারাদিন ঘুরে দুই থেকে আড়াইশ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে পারি। এতে আমার চারশ থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয়”।
আরিফের কাছে হাওয়ায় মিঠাই কিনতে আসা ৩৪ বছরের এক যুবক তুহিন জানান, তিনি আজো ভুলতে পারেন না ‘হাওয়াই মিঠাই’র স্বাদ।দিন বদলে গেছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে। অতীত ইতিহাস অনেক কিছুই মানুষ ভুলতে বসেছে। যুগের হাওয়া লেগেছে গ্রাম-গঞ্জেও। ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি একটি শিশুদের খাবার রঙিন দুষ্ট মিষ্ট হাওয়াই মিঠাই। এখনো গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কালের সঙ্গে বদলে যাওয়া; একসময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যেতো।
কিন্তু, আধুনিকতার কারণে এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি। কাঁচ দিয়ে ঘেরা বাক্সে ছোট ছোট গোলাকার কিংবা টিনের বাক্সে রাখা হাওয়া মিঠাই হারিয়ে গেছে। তবে এখনও হাওয়ায় মিলিয়ে যায়নি এ হাওয়ায় মিঠাই। কালের পরিক্রমায় আজ সেই ছোট ছোট গোলাকার হাওয়াই মিঠাই গুলো আজ ফেঁপে বেশ বড় হয়েছে। এখন কাঠিতে পেঁচিয়ে পলিথিনে মোড়ানো বিভিন্ন রঙের হাওয়াই মিঠাই দেখা যায় শহরের পথে পথে। দামও বেড়েছে; দশ থেকে পনেরো টাকায় এখনও এ স্বাদ মুখে নেয়া যায়। বড় আকারে হাওয়াই মিঠাই পলিথিনে মুড়িয়ে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ফেরিওয়ালারা বিক্রি করেন!
এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল যেমন একত্রে দেখলে মনটা ভালো হয়ে যাই,ফুলের প্রতি একটা আর্কষণ কাজ করে ঠিক তেমনি হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার চাইতেও এর দেখার আকর্ষণটা কোনো অংশে কম নয়। পেজা তুলোর মতো তুলতুলে ও গোলাপি-সাদা রঙয়ের এই ঐতিহ্যবাহী হাওয়াই মিঠাই দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। কালের পরিক্রমায় আজ সেই ছোট ছোট গোলাকার হাওয়াই মিঠাই আকারে ফুলে ফেঁপে বেশ বড় হয়েছে। কাঠিতে পেঁচিয়ে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এখন সব জায়গায় পাওয়া যায়। এখন কাঠিতে পেঁচিয়ে পলিথিনে মোড়ানো বিভিন্ন রঙের হাওয়াই মিঠাই দেখা যায় শহরের পথে পথে।
মো :নাইম হাসান রিদয়( শিক্ষার্থী) সাংবাদিকতা মিডিয়া এবং যোগাযোগ বিভাগ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Leave a Reply