চিকিৎসা একটি মহান পেশা। এ পেশায় যারা জড়িত তাদেরও সকলকে মহান হওয়া অত্যাবশকীয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমাদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সমস্যা যে শুধুমাত্র চিকিৎসকদের তা কিন্তু নয়।যেমন আমাদের সকলের ধারনা কোন ধরনের ডাক্তার দেখাতে গেলেই প্রথমেই একজন ডাক্তার অনেক গুলো পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে দেয়, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, কোন কিছুর উপর নির্ভর করে,পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কখনোও সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায় না। রোগীর কি ধরনের সমস্যা, তা বের করতে হলে অবশ্যই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। ডাক্তার যদি মনে করেন তবেই তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিবেন।
বর্তমান সময়ে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক মালিকরা যখন কোন ডাক্তার কে তার হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চেম্বার করতে নিয়ে আসেন তখন বলা হয়, স্যার আপনি রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিবেন। ডাক্তার তখন খাতিরে হলেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে লিখে দেন। আবার বলেও দেন এই হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো করানো হয়। রোগীরা তখন চিন্তা করেন কোথায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ভালো হবে।
এবার আসি হাসপাতাল, ক্লিনিক এর মার্কেটিং বিভাগের কিছূ কথা নিয়ে। যারা মার্কেটিং এর কাজের সাথে জড়িত, তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। ধরুন আপনি কোন ওষুধের দোকানের লোকের মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যমে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কোন ডাক্তার দেখানোর জন্য সিরিয়াল দিয়েছেন, সেই ডাক্তার যদি আপনাকে কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দিয়ে থাকে তবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মোট টাকার একটি অংশ, আপনি যার মাধ্যমে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন তার মোবাইলে চলে যায়। অবিশ্বাস হলেও সত্য যে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রায় অর্ধেক টাকা কর্তৃপক্ষ মার্কেটিং এর মাধ্যমে ঐ লোকের কাছে দিয়ে দেয়। দেখা গেল আপনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ২০০০ টাকার মত লাগবে, সেখান থেকে প্রায় অর্ধেক টাকা যেই ব্যক্তি, রোগী হাসপাতালে প্রেরন করেছেন তার কাছে চলে যাবে। অর্ধেক টাকার বেশি যদি কমিশন বাবদ চলে যায় তাহলে কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার জন্য যে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ভাড়া,বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিলে, ভালো ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য যে, মেডিসিন দরকার হয়, সেই মেডিসিন ক্রয় করা সম্ভব হয় না। তখন তারা অর্থাৎ হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নিম্ন মানের মেডিসিন দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়, যার ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ভালো আসে না।
যতদিন আমাদের মন-মানসিকতা ভালো না হবে অর্থাৎ কমিশন বানিজ্য বন্ধ না হবে ততদিন ভালো মানের চিকিৎসা ব্যবস্থা আশা করা আমাদের জন্য বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না।
গত কয়েক বছরের সমীক্ষা টানলে দেখা যায় যে, আমাদের দেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষের বেশি মানুষ যাতায়াত করে। তাদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মত ব্যয় হয় চিকিৎসার জন্য। এই পরিমাণ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে ভারতের থেকে উন্নত মানের হাসপাতাল তৈরী করা সম্ভব। কিন্তু আমরা সে দিকে লক্ষ দেই না।
আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা,প্রয়োজন নিজেদের মনোভাব পরিবর্তন করা। আমরা যদি আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারি তবেই চিকিৎসা ক্ষাত আরো উন্নত হবে।
সমালোচনা নয়, আসুন নিজেকে পরিবর্তন করি।
Leave a Reply